গত বছরের ১৫ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও পুলিশ। রাতটিকে স্মরণ করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপাচার্যের বাসভবন প্রাঙ্গণে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে কালরাত্রী উদযাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দ্বিতীয়দিনের কর্মসূচির আওতায় রাত এগারোটার দিকে গত বছরের ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে হামলার শিকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকরা স্মৃতিচারণ করেন। এরপর গতবছর ১৫ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। রাত ১২ টায় এক মিনিটের জন্য পুরো ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়। সবশেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের মধ্যে গিয়ে শেষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, গত বছর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের মিছিলে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। ওই হামলা অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর হামলার বিচার দাবি করে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে রাত বারোটার দিকে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা মাথায় হেলমেট পরে সশস্ত্র হয়ে উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এর আধাঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হামলা বিরত রাখেন ছাত্রলীগ। কিন্তু তার দেড়টার দিকে পুলিশের সামনে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের তালা ভেঙে ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা চাপাতি, কাচের বোতল, পেট্রোল বোমা, রড ইত্যাদি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ওই হামলায় শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এই খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে প্রতিরোধ গড়ে তুল্লে পুলিশ তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, কাদনে গ্যাসের ছুঁড়েন। এতে শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। ওই রাতে ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়িত হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, গত বছরের ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে ছিল ভয়ঙ্কর একটি রাত। ছাত্রলীগ, সন্ত্রাসী ও পুলিশ মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর নারকীয় হামলা চালায়। রাতটিকে স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কালরাত্রী ঘোষণা করেছিলেন। শত শত শিক্ষার্থীর রক্তের বিনিময়ে আমরা ক্যাম্পাসকে ওইরাতেই ছাত্রলীগমুক্ত করেছিলাম। যেটা দেশের প্রথম কোনো ক্যাম্পাস যেখান থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়িত হয়েছিলো।