ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার (৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে এটি আনুষ্ঠিত হয়।
এসময় জুলাই উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধাক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে কুষ্টিয়া সদরের শহীদ সবুজের স্ত্রী রেশমা খাতুন, শহীদ রাকিবুলের পিতা আবু বক্কর সিদ্দিক, শহিদ ইউসুফের মেয়ে সিমা খাতুনসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শহীদ ইউসুফের মেয়ে সিমা খাতুন বলেন, ‘৫ আগষ্ট সকাল বেলা আমার বাবা বাজার করে নিয়ে আসার পরে আমাদের গলিতে পুলিশ গুরি করছিলো, টিয়ারসেন ছুড়ে। আমার বাবা বৃদ্ধ হওয়ার পরেও ঘরে বসে থাকতে পারেনি। সে আন্দোলনে সারা দিন ছিল। আন্দোলনে তার গায়ে রাবার বুলেট পড়ে। আমি খবর পেয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠাই। চিকিৎসা নিয়ে এসে আমিও বসে থাকতে পরি নি ৫আগষ্ট আমিও আন্দোলনে নেমে পড়ি। পরে দুপুর ২ টার পর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি একসাথে ৩জন শহীদ। প্রথমে বুঝতে পারছি লাম না। পরে আব্বার পা দেখেই দেখেই বুঝতে পেরেছি।’
শহীদ রাকিবুলের পিতা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হোসেন ১৯শে জুলাই মিরপুর ১০ নাম্বারে গোলচত্বরের ওখানে গুলিবিদ্ধ হয় এবং ১০ থেকে ১২ মিনিটের ভিতরেই আমার সন্তান মারা যায়। আজমল হাসপাতালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।ছেলের সেই রক্তমাখা মুখ, বুক, মাথা এখনও ভুলতে পারি না। ছেলের স্মৃতি বারবার মনে আসে। প্রতিদিন ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি করে দিন কেটে কেটে আজ এক বছর পনেরো দিন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আমাদের নিয়ে আসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন, শহীদের অভিভাবকদের এখানে জমায়েত করার জন্য উনারা গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে আমাদের শহীদদের স্মরণ রাখার জন্য এইভাবে যদি বছরে কমপক্ষে একটা অনুষ্ঠানও করা হয়, তবুও আমরা সন্তুষ্ট থাকবো।’
শহিদ সবুজের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, আমরা স্বামী জীবন দিয়েছে দেশের জন্য, জাতির জন্য সেটা যাতে দেশ মনে রাখে। আমার স্বামীকে হত্যার ঘটনায় মামলা করেছি, ১১ জন গ্রেফতার করেছে, কিন্তু এখনও বিচার করা হয়নি। আমরা কিছু চাই না তবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে। সকল শহিদ পরিবারের প্রতি সুনজর রাখবেন। আমি সুবিচার চাই এবং খুনিদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চাই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি জুলাই আন্দোলনের শহিদদের জন্য উৎসর্গিত। আমি শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট রেজিমকে উৎখাতে যারা জীবন দিয়েছে তাদের প্রতি আমরা চির ঋণী। রক্তের মূল্য কখনো পরিশোধ করা যায় না। রক্তের বিনিময়েই একটা পরিবর্তন আসে। এর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিকে জাগ্রত হতে হয়। জুলাই আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ না হলে ফ্যাসিস্ট রেজিমকে সমূলে উৎপাটিত করা যেত না। আজকের বাংলাদেশ আর পিছনে ফিরে যাবে না। দেশে নতুন ফ্যাসিস্ট তৈরি হবে না। দেশ গণতন্ত্রহীন হবে না। আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিতে হবে। দেশ পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না হলে ফ্যাসিস্ট আবারো মাথাচাড়া দিবে।
তিনি আরো বলেন, শহীদ পরিবারদের যাতে আমরা ভুলে না যাই। তিনি শহীদ পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। জুলাই এর স্পিড ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানায়।সরকারের প্রতি অনুরোধ শহীদদের স্মৃতি জাগ্রত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিন। আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই।
ইবি/মাওয়াজুর রহমান