কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্র*লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা ঘটনার নয় বছর পার হলেও এখনো শেষ হয়নি তদন্ত ও চার্জশিট গঠনের কাজ। বারবার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন, চার্জশিটে কখনো আসামি বাদ, কখনো নতুন আসামি যুক্ত আবার কখনো আদালতে নিহতের মায়ের নারাজিতে কেটেছে এই দীর্ঘ সময়।
জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে আগস্ট মাসের প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় বর্তমান বিজয়-২৪ হলে (তৎক্ষালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল)। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্র*লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ। তার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সদরে।
ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মজুমদার বাদী হয়ে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা পরিচয়ে সদর দক্ষিণ থানায় মামলা করেন। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র*লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি রুপম চন্দ্র দেবনাথ, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ, ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল আলম, লোক প্রশাসন বিভাগের আবুবকর ছিদ্দিক, সুদীপ্ত নাথ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সজন বরণ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন দিন পর মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র বিপ্লব চন্দ্র দাসকে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটকের পর বিপ্লব আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে বর্তমানে আটককৃত সবাই জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
এই মামলার প্রেক্ষিতে প্রথমে তদন্ত করেন জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। সংস্থাটি ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। এই চার্জশিটে নারাজি দেন খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আবারো তিনিই নারাজি দেন সেই চার্জশিট বিষয়ে। এরপর মামলাটি পিবিআই থেকে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) যায়। ফের নারাজির পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারও পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ তদন্তের পর গত ২৫ জুলাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তবে সে প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতনের অনুমোদন পায়নি। এর মধ্যেই সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই থেকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (সদর সার্কেল) কাছে আছে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, ‘আমার কাছে মামলাটি রিভিউয়ের জন্য এসেছে। আমি এটি নিয়ে কাজ করছি। মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
নিহত খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘গত সরকারের আমলেই আমার ছেলে হত্যার বিচার হয় নাই। এখন নতুন প্রশাসন আসছে। বিচারের কিছু দেখছি না। তৎকালীন সময়ে ছাত্রলীগের কারণে আমার ছেলের হত্যায় ঠিকঠাক তদন্ত হয়নি। এজন্য বারবার চার্জশিট গঠনের পর আদালতে নারাজি দিয়েছে। সঠিক আসামিদের নাম উঠে না আসা পর্যন্ত আমি নারাজি দিব৷ ৯ বছর গিয়েছে, আরো ৯ বছর লাগলেই সমস্যা নেই।’
এ ব্যাপারে উক্ত মামলার বাদী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘মামলাটির একাধিকবার চার্জশিট গঠন হয়েছে। কিন্তু নিহতের মায়ের নারাজিতে বারবার মামলার তদন্ত পিছিয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ রক্ষা করছি পুলিশ প্রশাসনের সাথে, যেন মামলাটির কার্যক্রম দ্রুত শেষ হয়।’