জাবির ইউআরপি বিভাগে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দাপটে, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

Site Favicon প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৮:৪২ আপডেট করা হয়েছে: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৮:৪৩
A+A-
Reset

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের (ইউআরপি) স্নাতকোত্তর চুড়ান্ত পর্বের (ফাইনাল সেমিস্টার) শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষ হয়েছে তিনমাস আগে। তবে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্লাস শেষ হওয়ার তিনমাস পার হলেও পরীক্ষা শুরু হয়নি। কবে নাগাদ পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হবে সেটারও কোনো নিশ্চয়তা পাননি শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৪৯ তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর দেওয়া একটি অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ বিভাগের বর্তমান সভাপতিকে চাপে রাখতে কোনো পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে তাদের পরীক্ষাগুলো আটকে আছে।

বিভাগটির ৪৮ তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্নাতকোত্তরে চূড়ান্ত পর্বের ক্লাস ও টিউটোরিয়াল শেষ হয় চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল। সে হিসেবে স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পর্বের ক্লাস তিনমাস আগে শেষ হলেও এখনো পরীক্ষা শুরু করেনি বিভাগটি।
তবে কবে নাগাদ পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হবে শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে, পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাসফিয়া নাহরীন কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি বলেছেন, “যে কোনোদিন পরীক্ষা হতে পারে। এমনও হতে পারে পরীক্ষার আগের দিন রুটিন দেওয়া হয়েছে।” এভাবে পরীক্ষাটি দোদুল্যমান থাকায় আমরা মানসিকভাবে হতাশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।

ইউআরপি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওই বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাজিদ ইকবালকে থিসিসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষক অধ্যাপক শফিক-উর রহমান এবং সহযোগী অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান উদ্দেশ্যমূলকভাবে কম নাম্বার দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এছাড়া সাজিদের থিসিস মূল্যায়নে ওই দুইজন শিক্ষক নির্বাচনে সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক প্রভাবিত করেন এবং তিনি প্রশ্নফাঁস করেছেন দাবি করে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে একদল শিক্ষার্থী প্রথমে আফসানা হকের বিরুদ্ধে উঠানো অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেন। এ ঘটনার জের ধরে বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি দল পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করছেন না।

Top Selling Multipurpose WP Theme

বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মূলত অধ্যাপক শফিক-উর রহমান, অধ্যাপক কাসফিয়া নাহরীন (সম্পর্কে শফিক-উর রহমানের স্ত্রী), অধ্যাপক গোলাম মইনুদ্দীন, অধ্যাপক হালিমা বেগম, সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক, সহযোগী অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক একটি গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন। তারা সবাই ক্যাম্পাসে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক বলে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের দেওয়া বিবৃতিতে তাদের নাম দেখা গেছে।

তবে এসব শিক্ষকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মূলত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। তাদের দাবি, অভিযোগকারী শিক্ষার্থী সাজিদ ইকবাল কিভাবে পরীক্ষা সংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য জেনেছেন সেটা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়ে স্পষ্ট না করা পর্যন্ত শিক্ষকদের একটি অংশ পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না।
প্রশ্নপত্র জমা দেয়নি যারা:
৪৮ তম ব্যাচের ফাইনাল সেমিস্টারে মোট ৫ টি কোর্স রয়েছে। এরমধ্যে অধ্যাপক শফিক-উর রহমান ও হালিমা বেগন প্রশ্নপত্র জমা দেননি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি কাসফিয়া নাহরীন বলছেন, “এটি গোপনীয় বিষয়। এটি প্রকাশ করলে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে।”
তিন মাস পরেও কেনো পরীক্ষা হচ্ছেনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো গুরুত্বপূর্ণ নিউজ থাকতে আপনারা একটা বিভাগের পরীক্ষা নিয়ে নিউজ কেনো করতে চাচ্ছেন? কোর্স শিক্ষকরা এখনো আমার কাছে প্রশ্ন জমা দেননি। প্রশ্ন জমা দেওয়ামাত্র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা মিনিমাম সময় দেব পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। তারপর পরীক্ষার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করব।

এ বিষয়ে স্নাতকোত্তরেরে একটি কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক মো. শফিক-উর রহমান বলেন, সম্প্রতি বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে অতি পোপনীয় বিষয় ফাঁসের সন্দেহ বা অভিযোগ নিয়ে বিভাগের দুই থেকে তিনজন শিক্ষক বাদে অধিকাংশ শিক্ষক পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছেন না। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিষয়টি সমাধান হলে তারপর হয়তো তারা কাজ করবেন।
ওই অধিকাংশ শিক্ষকদের তালিকায় তিনিও আছেন কি না-জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান এবং প্রশ্নপত্র জমা দিয়েছেন কি জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এসব বিষয়ে জানতে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনিসা নূরী কাঁকনের মুঠোফোনে কয়েক দফায় কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সার্বিক বিষয়ে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। আমি নিজে ওই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। তাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, তদন্তের কাজ তদন্তের মত করে চলুক, আর বিভাগের কাজ বিভাগের স্বাভাবিক নিয়মে চলুক। কিন্তু তারা সেটা কর্নপাত করেনি। শিক্ষকদের মধ্যে দুটো গ্রুপের দ্বন্দ্বে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য দেশের বাইরে আছেন, তিনি দেশে আসলে আমরা প্রয়োজনে প্রশাসনিক সভা করে এটার ব্যবস্থা নেব। এভাবে একটি বিভাগ চলতে পারে না।

Top Selling Multipurpose WP Theme

আপনার পছন্দ হতে পারে