রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে দোকান বরাদ্দের টেন্ডারে ‘অস্বচ্ছতার’ অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার বেলা সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে ‘ওপেন টেন্ডারটি’ আয়োজিত হয়। টেন্ডারের দরপত্র সকলের সামনে প্রকাশ করে ঘোষণার কথা থাকলেও দরদাতাদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর নিয়ে দরদাতাদের দেওয়া দরের পরিমাণ প্রকাশ না করেই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন দরদাতারা। ওপেন টেন্ডার মেথডে (ওটিএম) দরপত্র খোলার দিনেই জনসম্মুখে ফলাফল ঘোষণার নিয়ম থাকলেও গত দুইদিনেও ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
টেন্ডারে দরপত্র জমা দেওয়া দাতারা জানান, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নতুন তৈরী করা কয়েকটি দোকানের বরাদ্দে দরপত্র আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের সামনেই জমাকৃত দরপত্রের দরের পরিমাণ ঘোষণা কথা থাকলেও তাদেরকে উপস্থিতির স্বাক্ষর রেখে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এতে তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশঙ্কা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, টেন্ডার খোলার দিনে দরদাতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সামনেই দরপত্র খোলা হয়েছে। দরদাতারা যে দর দিয়েছে সেটার তালিকা ‘ইভালুয়েশন’ কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি তারা মূল্যায়ন করে সর্বোচ্চ দর দাতাদের পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য চিঠি প্রদান করবে। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এর তিন বছর পর ২০২২ সালের শেষের দিকে মহাপরিকল্পনা না মেনেই ক্যাম্পাসের পাঁচটি পয়েন্টে ১৫টি দোকান ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ শুরু করে প্রশাসন। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৭৬ লাখ টাকা। এর পরে দুই বছরের অধিক সময় দোকানগুলো বরাদ্দ না দেওয়ায় ফাকা পড়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন দোকানগুলোর ৭ টি দোকান বরাদ্দ দিতে দরপত্র আহ্বান করে। গত সোমবার টেন্ডারের দরপত্র দর দাতাদের সামনে খোলা এবং ঘোষণার কথা ছিলো। সেদিন দরদাতারা উপস্থিত হলে তাদের সামনে দরপত্র খোলা হয়। সকলের সামনে খোলা হয় টেন্ডার বক্স। এতে ৭ টি দোকান বরাদ্দ পেতে ১৭ টি দরপত্র জমা হয়। এ সময় তাদের দর দাতাদের উপস্থিতি স্বাক্ষরও নেওয়া হয়। তবে, দর দাতাদের জমাকৃত দর সেদিন ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এতে দরদাতারা টেন্ডারে অনিয়মের আশঙ্কা করেছেন।
দুইদিন পরেও টেন্ডারের ফলাফল ঘোষণা না হওয়ায় অনিয়মের আশঙ্কা জানিয়ে দরদাতা মো. ইব্রাহীম আকন্দ উত্তরা প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত দুই দিন আগে দোকানগুলো বরাদ্দ দিতে টেন্ডার বক্স খোলা হয়। এর পরে আজও ফলাফল দেওয়া হয়নি। আমি মনে করছে এখানে রাজনৈতিক প্রীতি বা যেকোনো অনিয়ম হতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও দুই দর দাতা জানান, ‘সেদিন আমরা উপস্থিত হই। আমাদের উপস্থিতির স্বাক্ষরও নেওয়া হয়। এ সময় প্রথমে আমাদের সামনে টেন্ডার বক্স খুলে আমাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিয়ম না মেনেই তারা ফলাফল আমাদের সামনে ঘোষণা না দিয়ে ফেরত পাঠান।’
ওপেন টেন্ডার মেথড (ওটিএম) দরপত্র আহ্বান করা হলে তার ফলাফল টেন্ডার বক্স খোলার দিনই ঘোষণা করতে হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার শাহরিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘ওটিএম’র ফলাফল সাধারণত টেমডার যেদিন খোলা হয় সেদিনই ঘোষণা করতে হয়। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আমি যুক্ত নই। এটার ব্যাপারে কথা বলতে আপনি প্রধান ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
টেন্ডারের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর মুঠোফোনে কল করলে তিনি কেটে দেন।
অভিযোগটি অস্বীকার করে দোকান বরাদ্দ বিষয়ক কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান গতকাল বিকেলে উত্তরা প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত দুইদিন আগে আমার কার্যালয়ে এই টেন্ডারটি খোলা হয়। সেখানে সকল দর দাতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সামনেই দরপত্র খোলা হয়েছে। এরপরে সেটি মূল্যায়ন কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।’