‘আমাদের শিক্ষা আনন্দদায়ক নয়’ – ড. সলিমুল্লাহ খান

Site Favicon প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২৫ ২৩:০৩
A+A-
Reset

বাংলাদেশের শিক্ষা আনন্দদায়ক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা আনন্দদায়ক নয়। এর কারণ হচ্ছে আমাদের ভালো শিক্ষক নেই। শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর মাঝে আগে ছিল হাইফেন, যা এখন লম্বা ড্যাসে পরিণত হয়েছে। এই ড্যাস বড় হতে হতে পৃথিবীর পরিধির সমান হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষক একদিকে আর শিক্ষার্থী আরেক দিকে এবং মাঝখানে প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে।’

আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: কোন পথে?’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরামের তিন যুগপূর্তি উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের যদি শিক্ষাকে স্থায়ী করতে হয় তাহলে শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রথম কাজ হচ্ছে আমাদের পাঠক তৈরি করা। পাঠক মানেই শ্রোতা তৈরি করা, দর্শক তৈরি করা। মানুষ তার সমস্ত ইন্দ্রিয় ব্যবহার করতে পারে এমন শিক্ষা তৈরি করা, যেটা আমরা পারিনি।’

ব্রিটিশ শাসন অবসানের আশি বছরেরও দেশের মানুষকে শতভাগ শিক্ষিত গড়ে তুলতে পারিনি প্রশ্ন তুলে এই চিন্তাবিদ বলেন, ‘আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে দুইবার। উনিশশো একাত্তর সালে একবার আর উনিশশো সাতচল্লিশ সালে আরেকবার। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকে আমাদের স্বাধীনতা প্রায় আশি বছর ছুই ছুই। তাহলে ওই দেশের মতো শতকরা একশজন শিক্ষিত আমরা কেন গড়ে তুলতে পারিনি?’

Top Selling Multipurpose WP Theme

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে কতজন মানুষ সংবাদপত্র পড়তে পারে? আমাদের দেশে একটা হিসাব আছে যারা নাম-দস্তখত স্বাক্ষর করতে পারে, তারাই পাঠক। তাহলে তো শতকরা ১৪ জন লোক পড়তে পারে। কিন্তু ইউনেসেস্কোর হিসেবে শতকরা ৫-৬ জন লোকও পত্রিকা পড়ে না। এর কারণ যেমন অনেকে পড়ে না, আবার অনেকে পড়তে পারে না। তাহলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে দেশের শতভাগ মানুষ পড়তে পারে সেই ব্যবস্থা কি করতে পারি না?’

নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে বাধা প্রসঙ্গে এই লেখক বলেন, ‘আমাদের দেশে সব মিলিয়ে ৩৫ ধরণের প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু সব মিলিয়েও আমাদের দেশে শতভাগ মানুষ পঞ্চম শ্রেণি শেষ করতে পারে না। প্রথমিক শিক্ষা শতভাগ কেন আমরা নিশিত করতে পারিনি শুধু এই প্রশ্নটা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে বাধাটা কোথায় তার ঠিকানা পাবো।’

শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় বলে জানান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি সংস্কার করতে না পারা যায়, শিক্ষাকে যদি মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা না যায়, তাহলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

বর্তমান শিক্ষাকে দর্শনবিরোধী শিক্ষা অ্যাখ্যা দিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘যে চিন্তা করতে জানে না, প্রশ্ন করতে জানে না তাকে দার্শনিক বলা যায় না। আমাদের বর্তমান শিক্ষা হচ্ছে সম্পূর্ণ দর্শনবিরোধী শিক্ষা। সম্পূর্ণ মঙ্গলবিরোধী শিক্ষা, কারণ এটা সত্যবিরোধী।’

Top Selling Multipurpose WP Theme

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘শিক্ষা সংকটে পথ দেখায়। আমরা সমস্যায় পড়লে শিক্ষা সমাধান দেখিয়ে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে মানুষের অধিকার, ইনসাফ, সমাজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও লাভ নেই। শিক্ষার সাথে এই বিষয়টি দেখতে হবে।’

ডসেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম. রফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, পাঠক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ হাসনাত প্রমুখ।

আপনার পছন্দ হতে পারে