ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলার এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার স্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের এক নেতাকে পরকীয়ার সন্দেহে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় ঘটনাটি ধামরাইয়ের ইসলামপুর নামক জায়গায় ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ওই নেতার নাম রেজাউল করিম। তিনি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার নাম নাম সাগর আহমেদ। তিনি ধামরাই পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায় কমিটির সদস্য।
মারধরে অভিযুক্ত সাগর আহমেদ, তার স্ত্রী, ছাত্রদল নেতা রেজাউল ও ইসলামনগর এবং ধামরাইয়ের আলাদা কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৬ জুন সাগর আহমেদ নামের ওই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাবি সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকায় জনৈক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একটি তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে।
তবে গত দেড় বছর আগে জাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ওরফে রেজা তাদের পরিবারে যাতায়াত শুরু করেন। সাগর আহমেদের স্ত্রী তার বিভিন্ন পারিবারিক কারণে পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করতেন। সেই সূত্রে ছাত্রদল নেতা রেজার সঙ্গে তার সখ্যতা বাড়ে এবং এক পর্যায়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি সাগর আহমেদ লক্ষ্য করে বিভিন্ন সময়ে তার স্ত্রীকে সতর্ক করেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এমনকি তার পরিবারেও জানিয়েছিলেন। তবে গত দুই থেকে তিন মাস আগে তার কাছে আরও সন্দেহের বিষয়টি ঘনীভূত হয় এবং বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখেন সাগর। এক পর্যায়ে সাগর তার স্ত্রীকে রেজার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের নির্দেশও দেন। তবে সাগরের স্ত্রী এ নির্দেশ না মানায় বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত রেজা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নবীনগরে গেলে সেখানে দেখা হয় সাগরের সঙ্গে। পরে সাগর তার সাথে আরও বেশ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তাকে ধামরাইয়ের ইসলামপুর সংলগ্ন স্থানে নিয়ে যান এবং সেখানে মারধর করেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাগরের স্ত্রী তাকে ফোন করে রেজাকে ছেড়ে দিতে বলেন। না হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও হুমকি দেন। সাগর সে সময় রেজার কাছ থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু আলাপ দেখতে পান। তবে বেশিরভাগ মেসেজ সেখানে মুছে দেওয়া ছিল।
তবে তার স্ত্রীর বিশেষ অনুরোধে তিনি এবং এক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী যিনি বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা জেলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন তার নির্দেশে রেজাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে রেজা আশুলিয়া থানায় উপস্থিত হলেও পরকীয়ার মামলা করা হবে এমন ভয় থেকে আর সাগরের নামে কোন ধরণের মামলা দায়ের করা হয়নি।
এ বিষয়ে সাগর আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন থেকে বিষয়টি নিয়ে তিনি তার স্ত্রীকে সতর্ক করলেও তার স্ত্রী এতে কর্ণপাত করেনি। এমনকি সম্পর্কচ্ছেদ করার তো দূরের কথা, তাদের মধ্যে যেই আলাপ আলোচনা সেটিও বন্ধ করেনি। এছাড়াও তিনি সাগরকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ পান বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান সাগর।
সাগর আহমেদের স্ত্রী জানান, রেজার সঙ্গে যে সম্পর্ক সেটি শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক, এর বাইরে আর কিছু নেই। পরকীয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। বরং অভিযোগ করেন সাগর আহমেদ দীর্ঘদিন থেকে মাদকাসক্ত। বিভিন্ন সময়ে টাকা চাইতেন। সর্বশেষ ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছেন। টাকা না দেওয়ায় তাকে ডিভোর্স দিতে চান। সেই ডিভোর্স দেওয়ার জন্য একটি নাটক সাজিয়েছেন সাগর।
তবে গত জুন মাসের একটি ফেসবুক পোস্টে দেখা যায়, রেজাউল করিমের স্কিনচার্ম নামক একটি ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসায় উদ্যোগের প্রচারণা করছেন সাগরের স্ত্রী। এছাড়াও রেজার সঙ্গে সাগরের স্ত্রীর হোয়াটসঅ্যাপের আলাপেও অতি ঘনিষ্ঠ শব্দের ব্যবহার, ভিডিও কলে কথা বলার নজির পাওয়া গেছে। ভালো ফ্রেন্ড হিসেবে এগুলো করেছেন বলে জানিয়েছেন সাগরের স্ত্রী।
বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, “তার সঙ্গে প্রায় আট বছর ধরে অর্থাৎ বিয়ের আগে থেকেই তার পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক, আমাদের এটা ফ্যামিলি রিলেশন। আমাদের মধ্যে শুধু এমনি আলাপ আলোচনা হয়েছে, তবে কোন ধরণের পরকীয়ার সম্পর্ক নয়। ”
মারধরের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, এটি নিয়ে কথা বলতে চাই না। এটা মীমাংসিত বিষয়