
প্রধান ফটক, ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বছর পেরিয়েছে। অনেকে মাস্টার্স শেষ করে ক্যম্পাস ছেড়েছেন। তবে এখনও হাতে পাননি মার্কশিট। এতে চাকরি কিংবা বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদনসহ অনেক ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সফটওয়্যার সিস্টেমে সমস্যার কারণে মার্কশিট সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এটির সমাধান কবে হবে তাও অনিশ্চিত। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, পূর্বে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট ও নম্বরপত্র প্রদান করা হতো। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে অনলাইনের মাধ্যমে এসব ডকুমন্টস প্রদানে প্রিন্ট সেবামাধ্যম চালু হয়। অনার্স ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এই সেবা পাবেন বলে জানানো হয়। তবে বাস্তবে কেবল সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদান করা হলেও মাার্কশিট পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সফটওয়্যার সমস্যার অজুহাতে এক বছর পার করে দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অটোমেশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করে থেকেন। সেখানে দেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমন অবস্থা সত্যি লজ্জাজনক। এ একটি নম্বরপত্রের জন্য আবার ক্যাম্পাসে আসতে হবে সেখানে যাতায়াত ভাড়াসহ অতিরিক্ত একটি অর্থ খরচ হয়ে যাবে। যা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন হোসেন বলেন, অনার্স শেষ করেছি এক বছরের বেশি হয়েছে। ক্যাম্পাস থেকেও চলে আসছি। অন্যান্য কাগজপত্র তুলতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস নম্বরপত্র না নিয়েই ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে। কবে দিতে পারবে সেটাও আমাদের নিশ্চিত করা হয়নি।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান বলেন, আমরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি। আমাদের অনেক সহপাঠী ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। এখনো অনেকেই নম্বরপত্র (মার্কশিট) পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নানা অজুহাতে কাগজপত্র উত্তোলনে বারবার ভুল ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নিয়মমাফিক প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ার পরও নম্বরপত্র দেওয়া হচ্ছে না। এ ভাোগান্তির অবসান চাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক গোলাম রব্বানী বলেন, অনলাইনে নম্বর প্রদানের ব্যবস্থা ভালো পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু সফটওয়্যার সমস্যায় বছরজুড়ে ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না। কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, যে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, সেটি ছয় মাস আগেই শেষ হয়েছে। এরপরও নতুন করে কোনো চুক্তি বা এটির সমাধানে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারেনি প্রশাসন। যেটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও বিব্রতকর। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে এমন ঘটনা কখনো কাম্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ওয়ালিউর রহমান বলেন, সফটওয়্যারের সিস্টেমের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। মূলত যে কোম্পানির সঙ্গে কাজের চুক্তি ছিল তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুনভাবে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এরপর কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখনও চুক্তিপত্র হয়নি কিংবা কোম্পানিও ঠিক হয়নি বলে জানি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ড. শাহজাহান আলী বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। শুধু মার্কশিট নিয়েই সমস্যা হচ্ছে, বাকিগুলো ঠিকঠাকমতো আসছে। যে কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি করেছে তারা সমাধান না করলে এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্নভাবে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে নতুনভাবে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। নতুন করে সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে হবে এবং ডিজাইন করতে হবে। এটা সময় সাপেক্ষ এবং এর সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদিও জড়িত। বিষয়টির সমাধনে অফিসিয়ালি কাজ চলছে।